মার্কিন কবি এডগার অ্যালেন পো’র একটা নাতিদীর্ঘ কবিতা আছে , যার নাম ‘আল আরাফ’। ১৮২৯ সালে কবিতাটা প্রথম ছাপা হয়। কবিতায় পো কোরআন শরীফের ৭ন...

বর্ণবাদ, পুরুষতন্ত্র, প্রাচ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ হাত ধরাধরি করে চলে ইতিহাসে || আজফার হোসেন

5:48 AM Editor 0 Comments


মার্কিন কবি এডগার অ্যালেন পো’র একটা নাতিদীর্ঘ কবিতা আছে , যার নাম ‘আল আরাফ’।

১৮২৯ সালে কবিতাটা প্রথম ছাপা হয়। কবিতায় পো কোরআন শরীফের ৭নং সূরাকে খানিকটা ব্যবহার করেছেন। ওই সূরার খানিকটা মধ্যস্ততায় এবং পো’র ভাষ্য মোতাবেক ‘আল আরাফ’ একটি বিশেষ স্থানকে নির্দেশ করে, যে স্থান ঝুলে থাকে বেহেশত ও দোজখের মাঝামাঝি, যেখানে বসবাস করে অর্ধেক পাপী অর্ধেক পুণ্যবানেরা, যারা বেহেশতে ও দোজখে—উভয় জায়গাতেই—যাওয়ার সম্ভাবনা ধারণ করে।

কবিতাটা আসলেই বেশ জমে ওঠে পো’র দুর্দান্ত কাব্যকৌশলের কারণেই। কিন্তু গোল বাধে তখনই যখন পো ওই কবিতার কিছু কিছু জায়গায় আরব জগৎ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। আর কথা বলেন এমনভাবে যে, মনে হয় ওই জগতে রয়েছে কেবল রহস্য আর রোমাঞ্চ, তার বেশি কিছু নয়।

আর আরব জগত নিয়ে পো’র ইঙ্গিতময় কাব্যিক বয়ান নিমেষেই মনে করিয়ে দেয় ইংরেজ আলোকচিত্রী ফ্রান্সেস ফ্রিথ (১৮২২-১৮৯৮)-এর মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ফটোগ্রাফির কথা; এমনকি আরও মনে করিয়ে দেয় সেই ১৯২১ সালে তৈরি-করা এবং জর্জ মেলফোর্ড পরিচালিত বিখ্যাত ‘সাইলেন্ট মুভি’র কথা, যার শিরোনাম _দ্য শেইখ_। এ প্রসঙ্গে হিটলারের একটা প্রিয় সিনেমার নামও উল্লেখ করা যায়। এই সিনেমাটার শিরোনামেই আমাদের অঞ্চলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শিরোনামটা হচ্ছে _দ্য লাইভস অফ এ বেঙ্গল ল্যান্সার_ । ১৯৩৫ সালে ছবিটা তৈরি করা হয়। আর ১৯৩০ সালে ফ্রান্সিস ইয়েটস-ব্রাউন (১৮৬৬-১৯৪৪) ওই একই শিরোনামে একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস রচনা করেছিলেন।

বলা দরকার, এই ইয়েটস-ব্রাউন একসময় মেজর হিসাবে ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং ভারতের মাটিতেই তিনি ভারতকে দেখার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তার আগ্রহের দুটো এলাকাকে অনায়াসেই চেনা যায়। একটি হচ্ছে মুসলমান এবং অপরটি যোগ ব্যায়াম। উপন্যাসটিতে ইয়েটস-ব্রাউনের সাক্ষাৎ সৈনিক জীবনের অভিজ্ঞতায় ভারতের চিত্রায়ন প্রাচ্যবাদী অভিক্ষেপকে মোটেই এড়াতে পারেনি। সেখানে ভারত হয়ে উঠেছে একপেশে আধ্যাত্মিকতার আবাসভূমি, তার বেশ কিছু নয়।

কিন্তু ওই উপন্যাসের চেয়েও আরও বেশি প্রাচ্যবাদী হয়ে থাকে ওই সিনেমাটি। অবশ্য সিনেমাটা অনেকাংশেই মূল উপন্যাসের প্লট থেকে সরে এসেছে; ওখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে ভারতের দানা-বেঁধে-ওঠা স্বদেশীদের বিদ্রোহ দমনের বিষয়টা আর ওই বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর বীরত্বের কথা। অবশ্যই বলা যাবে যে, এই ছবিটির প্রতিটি মুহূর্তেই পুরুষতন্ত্র তার পেশি ফোলাতে থাকে। মোহাম্মাদ খান নামের একটা চরিত্রে পাওয়া যাবে এই ছবিতে। কিন্তু ছবিটাতে সে যতোটা না বিদ্রোহী, তার চেয়ে বেশি বর্বর।

হ্যাঁ, এভাবে সাদা চামড়ার মানুষেরা অনায়াসেই ভারতীয় মুসলমানদের এবং অন্যান্য অ-সাদাদেরও ‘বর্বরতা’র ছবি এঁকে ফেলে। আর হ্যাঁ, এভাবেই বর্ণবাদ, পুরুষতন্ত্র, প্রাচ্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ হাত ধরাধরি করে চলে ইতিহাসে। চলে এখনও। বলাই বাহুল্য, এদের বিরুদ্ধে কোনো যুৎসই লড়াই একপেশে এবং এককাকালীন হতে পারে না মোটেই। অর্থাৎ নিপীড়নের বিভিন্ন ও বড় এলাকাগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই বিরাজমান সম্পর্কগুলো 'শর্ট সার্কিট' করে কেবল "মাইক্রো-পলিটিক্স" দিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে পরে আরও কথা হবে।

0 comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.