ভাষা ও মতাদর্শ
রুশ ভাষা-দার্শনিক ভি. এন. ভলোসিনভ্ তার মার্কসিজম এ্যান্ড দ্য ফিলসফি অব ল্যাঙ্গুয়েজ-এ ভাষা নিয়ে আলোচনার একেবারে গোড়াতেই মতাদর্শের ওপর জোর দিয়েছেন। তার একটা কথা এইরকম : যে সব চিহ্নের সমগ্রকে ভাষা বলা যাবে, সেই সব চিহ্নের হাজিরা ছাড়া মতাদর্শের উৎপাদন সম্ভব নয়।
মার্কসের পথ ধরে ভলোসিনভ ভাষার সঙ্গে চেতনার চলমান দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে আগ্রহী হয়েছেন এবং এই পর্যবেক্ষণটাকে বিশেষভাবে সামনে এনেছেনঃ "ব্যক্তির চেতনা নিজেই সামাজিক-মতাদর্শিক ঘটনা।" আর ভাষা হচ্ছে ব্যবহারিক চেতনা।
তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এমন যে, ভাষা নিজেই 'মতাদর্শে' জারিত। আসলে মতাদর্শিকভাবে নিরীহ বা নিরপেক্ষ কোনো ভাষিক-উৎপাদন পদ্ধতি নাই, যদিও মতাদর্শ সব সময় সরাসরি দেখা নাও দিতে পারে।
বিজ্ঞানের ভাষাও মতাদর্শিক হতে পারে। সেই মতাদর্শ হতে পারে নৈর্ব্যক্তিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা (বা নৈর্ব্যক্তিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতার ভান)। এমনকি "বিজ্ঞানের আপাত-নিরপেক্ষ ভাষা পুঁজিবাদী মুক্তবাজার এবং পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শকে সমর্থন জোগাতে পারে", যে-কথাটা জোর দিয়েই বলেছেন ব্রিটিশ মার্কসবাদী ভূগোলবিদ ডেভিড হারভি তার বই জাস্টিস, নেচার এন্ড দ্যা জিয়োগ্রাফি অব ডিফারেন্স-এ।
এখানে গণিতের ভাষা নিয়েও দু-একটা কথা বলে নেয়া যায়। সেই ১৯৯৭ সালে আর্থার বি. পাউয়েল এবং ম্যারিলিন ফ্র্যাংকেস্টাইন-এর যৌথ সম্পাদনায় বেরিয়েছিল এথনো-ম্যাথেম্যাটিকস একটি প্রবন্ধ-সংকলন। এখানে প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই গণিতের ভাষার ও পদ্ধতির নিরপেক্ষতাকে মিথ হিসেবে প্রমাণ করে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং গাণিতিক ভাষার মতাদর্শিক টানাপোড়েনকেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে উন্মোচনও করেছে বটে।
প্রবন্ধগুলো বিশেষভাবে জোর দিয়েছে পশ্চিমা মুলুকের গাণিতিক ভাষার ইউরোপকেন্দ্রিকতার ওপর। এবারে ওই গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ থেকে গণিতবিদ দ্য' অ্যাম্ব্রোসিও-এর একটি উক্তি : "আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আধুনিক বিজ্ঞানের, বিশেষত গণিত ও প্রযুক্তির, সঙ্গে গভীর সম্পর্কে ও সহযোগিতায় উপনিবেশবাদ বিভিন্নভাবেই পোক্ত হয়েছে।"
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.