শুভ জন্মদিন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও কমরেড বদরুদ্দীন উমর! আজ ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী এবং মার্কসবাদী তাত্ত্বিক-অ্যাকটিভি...

শুভ জন্মদিন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও কমরেড বদরুদ্দীন উমর! || আজফার হোসেন

2:58 PM Editor 0 Comments

শুভ জন্মদিন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও কমরেড বদরুদ্দীন উমর!
আজ ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী এবং মার্কসবাদী তাত্ত্বিক-অ্যাকটিভিস্ট-ইতিহাসবেত্তা বদরুদ্দীন উমর ৮৬ বছরে পা দিলেন!

বিপ্লবী উমরের জীবন মানেই ক্ষমতার বিরুদ্ধে--সমস্ত ধরণের নিপীড়নের বিরুদ্ধেই--এক আপসহীন মহাকাব্যিক অভিযাত্রা! আমার এই তুচ্ছ জীবনে মেলা অপ্রাপ্তি আছে বটে, তবে এই তুচ্ছ জীবনের একটা বড় পাওনা হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক উত্তাল রাজনৈতিক পর্বে বেশ কিছু সময় ধরে লড়াকু বদরুদ্দীন উমরের কাছাকাছি থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা।

আজ কিছুক্ষন আগে যখন টেলিফোনে তাঁর সেই পুরানো, পরিচিত, কিন্তু প্রাসঙ্গিক কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠলো, যা শুনলাম এই দূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই (তিনি অভিযোগ করছিলেন কেন আমি তাঁর সঙ্গে বেশি বেশি দেখা করি নাই গতবার ঢাকায় থাকার সময়), তখন নিমেষেই উমরের রক্ত-দিয়ে-লেখা কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা মনে এসেছিল, যা নিয়ে শিঘ্রি বিস্তারিত লেখার পরিকল্পনা আছে। তবে আজ এতোটুক বলে রাখিঃ পৃথিবীব্যাপী সততা, সাহস আর জ্ঞানের দুর্দান্ত দৃষ্টান্তমূলক সম্মিলন ঘটেছে যে-সব চিন্তাবিদ আর অ্যাকটিভিস্টের মধ্যে, তাঁদের মাঝে অবশ্যই আমাদের উমর অন্যতম।

সত্য, বিভিন্ন এলাকায় উমর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে তাঁর কাজ নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী, কিন্তু আমাদের এই পচে-যাওয়া আপসকামী 'শিক্ষিত' মধ্যবিত্ত সমাজ এই আপসহীন ও সাহসী চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমরের কাজের মূল্যায়ন করতে যে সক্ষম হয় নাই এবং হবেও না, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নাই।

গত বছর বদরুদ্দীন উমরকে নিয়ে একটা ছোট নোট লিখেছিলাম। আজ তাঁর ৮৬তম জন্মদিনে সেই নোটটা বন্ধুদের সঙ্গে আবারও শেয়ার না করে পারছি না। নিচে নোটটা পেশ করলামঃ

দেশ থেকে দূরে থাকলে হয়তো এমনই হয় : যাদের সঙ্গে একসময় কাজ করেছি, তাদের কথা মনে হয়। বারবারই। আর বন্ধুদের সঙ্গে ওই কথাগুলো শেয়ার করার ইচ্ছাও হয়। তো, অল্প বয়সেই বাংলাদেশের যে দুজন বাম চিন্তক ও অ্যাক্টিভিস্টের একেবারে কাছাকাছি থেকে কাজ করেছি, তাঁদের একজন হলেন বদরুদ্দীন উমর, অন্যজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বদরুদ্দীন উমরের হাতে-গড়া (অন্যদের ভূমিকাও ছিল অবশ্য, বিশেষ করে আমার শিক্ষক ও কমরেড আহমদ ছফার) বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েক বছর কাজ করার কারণেই উমর ভাইয়ের একেবারে কাছাকাছি আসার সুযোগ ও সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আর ওই পদে আমার একজন যোগ্যতর পূর্বসূরি ছিলেন আমার দীর্ঘ সময়ের কমরেড, বন্ধু ও শ্রদ্ধেয় ভাই আনু মুহাম্মদ। সে সময়ে আমাদের সংগঠনের হয়তো সবচেয়ে সক্রিয় মানুষটা ছিলেন ওই সংগঠনেরই সহসভাপতি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। না বলে পারছি না যে, সেই সময়টা ছিল বাংলাদেশ লেখক শিবিরের ইতিহাসে এক উত্তাল, দারুণ তাৎপর্যময় অধ্যায়।

বেশ কিছু কথা মনে পড়ছে আজ। অক্সফোর্ডে পড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া, বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিকের পক্ষে সার্বক্ষণিক রাজনীতি করা এই বদরুদ্দীন উমর বাসে চলাফেরা করতেন। একদিন আমি আমাদের পুরানা পল্টনের লেখক শিবিরের অফিস থেকে বাসে করে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছি তাঁর মিরপুরের বাসায়। তখন কথায় কথায় জানতে পারলাম, তিনি বাংলাদেশের সমস্ত ‘শীর্ষস্থানীয়’ এবং ‘লোভনীয়’ পুরস্কার—আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ (এবং পরে এমনকি একুশে পদক) অন্যান্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন একের পর এক। তখন বাক্যের গনগনে চুল্লিতে তাঁর শব্দসব ফুটছিল টগবগ করে। তাঁর সততা আর সাহসের সামনে আমার মাথা নত হয়ে এসেছিল। মনে হলো, এই পাশে বসা মানুষটার পাশে না বসে তার পায়ের কাছে বসে থাকি। হাত দিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে দিই! তাঁর ওই সততা আর সাহসের কারণেই বদরুদ্দীন উমর সত্য কথাটা যেভাবে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে এবং পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে পারেন, তা কেউই তাঁর মতো করে পারেন না বলে আমি মনে করি। খালি খালি আমার প্রিয় মানুষ আহমদ ছফা এই কথা সাহস নিয়ে বলেন নাই, ‘আমি বদরুদ্দীন উমরের যুগে বাস করি বলে গর্বিত।’

আবারও জানাই কমরেড উমরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা--লড়াকু শুভেচ্ছা।

0 comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.